বক্তৃতা : প্রিয়নবি সাঃ এর প্রতি ভালবাসা ও তার আনুগত্য

প্রিয়নবি সাঃ এর প্রতি ভালবাসা ও তাঁর আনুগত্য

— মুহাঃ আবু হানিফ পাঠান



حامداً ومصلياً ومسلماً اما بعدُ. فأعوذ بالله من الشيطان الرجيم - بسم اللًٰه الرحمن الرحيم...   
يٰأيُّهَا الَّذِيْنَ أَمَنُوْا أَطِيْعُوْا اللًٰهَ و أَطِيْعُوْا الرَسُوْالَ. و قال رسولُ اللًٰهِ صلي اللًٰه عليه وسلم— مَن أَحَبَّ سُنَّتِي فَقَدْ أَحَبَّنِيْ وَمَنْ أَحَبَّنِيْ كَانَ مَعِيْ فِي الْجَنَّةِ
অদ্যকার খুদ্দামুত তলাবা কর্তৃক আয়োজিত জৌলুসপূর্ণ বক্তৃতা সেমিনারের শ্রদ্ধাভাজন সভাপতি,মান্যবর বিচারক মন্ডলী ও বিদগ্ধ সঞ্চালক এবং আমার সামনে উপবিষ্ট রাসুলের প্রতি ভালবাসায় সিক্ত একঝাঁক যুবা-তরুণ। সবাইকে আন্তরিক মুবারকবাদ জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য শুরু করছি।

প্রিয় উপস্থিতি!
আজকে আমার আলোচ্য বিষয় হল “নবি সাঃ এর প্রতি ভালবাসা ও তাঁর আনুগত্য ”।  সময়ের সংক্ষিপ্ত পরিসরে যতটুকু সম্ভব আলোকপাত করার চেষ্টা চালাব ইনশাআল্লাহ।

সম্মানিত সুধী!
নবি বলতে সব নবি নয় কেবল সর্বেশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি মুহাম্মদ সাঃ কেই বোঝানো হয়েছে। ভায়েরা আমার, মহানবি সাঃ কে আমরা কেন ভালবাসব? আমরা জানি পৃথিবীতে মানুষ মানুষকে ভালবাসে কয়েকটি কারণে। কাউকে ভালবাসা যদি হয় সৌন্দর্যের কারণে তাহলে ভালবাসার সবচে বেশী যোগ্য হলেন রাসুল সাঃ। কারণ তিনি মানুষের মাঝে সবচে সবচে বেশী সৌন্দর্যের অধিকারী। কাউকে ভালবাসা যদি হয় শক্তি-সামর্থের কারণে তাহলেও ভালবাসার সবচেয়ে বেশী যোগ্য হলেন রাসুলে আরাবি সাঃ। কারণ তাকে দেয়া হয়েছে বেহেশতি চার হাজার যুবকের শক্তি। কাউকে ভালবাসা যদি হয় তার চরিত্রের কারণে তাহলেও ভালবাসার জন্য সবচেয়ে বেশী যোগ্য মুহাম্মদ সাঃ কারণ তিনি হলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী, তার রয়েছে খুলুক্বুন আজীম। কাউকে ভালবাসা যদি হয় শিক্ষার কারণে তবুও ভালবাসার সবচেয়ে বেশী যোগ্য হলেন মহানবি সাঃ।  কারণ তিনি প্রেরিতই হয়েছেন মুআল্লিম বা শিক্ষক রূপে।

পেয়ারে হাযেরিন!
এতো গেল আকলি দলিল। কিন্তু সকল প্রকার দলিল-আদিল্লা উপেক্ষা করে মহানবি মুহাম্মাদ সাঃ কে ভালবাসাই হল ঈমানের দাবি।  হাদিসে পাকে এরশাদ হচ্ছে-
لاَ يُؤٍمِنُ أحَدُكُمْ حَتّٰى أَكُوُنَ أحبَّ إلَيْهِ مِنْ وَالِدِهٖ وَوَلَدِهٖ وَ النَاسِ أَجْمَعِيْنِ٠٠٠


তোমরা কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমাদের কাছে তোমাদের পিতামাতা, সন্তান—সন্ততি এবং সকল মানুষের চেয়ে প্রিয় না হব।( বুখারি ও মুসলিম)
হাদিসে আরো এরশাদ  হচ্ছে—
مَنْ أَحَبَّ سُنَّتِي فَقَدْ أَحَبّـنِي وَمَنْ أَحَبـنِي كَانَ مَعِي فِي الْجَنَّةِ 
যে ব্যক্তি আমার সুন্নাহকে ভালবাসল সে যেন আমাকেই ভালবাসল, আর যে আমাকে ভালবাসল সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে।

মুহতারাম হাযিরিন!
এবার আমি আপনাদের সামনে মহানবি সাঃ এর শর্তহীন আনুগত্য ও তাঁর অপরিহার্যতার ব্যাপারে আলোকপাত করব। আসুন জেনে নেয়া যাক, শর্তহীন আনুগত্য করা অত্যাবশ্যক কি না ?

    প্রিয় ভাইয়েরা আমার!  
আপনি একজনকে ভালবাসবেন অথচ তার থিউরিকে মানবেন না এটাতো হতে পারে না। যাকে ভালবাসবেন তার আনুগত্য করবেন না; তার অনুসরণ,  অনুকরণ করবেন না তাতো হতে পারে না। কাউকে ভালবাসার নিদর্শন হল সকল ক্ষেত্রে আপনি তাকে ফলো করবেন, তার স্টাইল, তার চলার ভঙ্গি, তার মত কথাবার্তা, তার আচার, আচরণ ও কৃষ্টি কালচার গ্রহণ করবেন।

সুধী মণ্ডলী!
যার প্রতি আপনার অগাধ ভালবাসা তার পোশাক আশাক, আচার আচরণ এমনকি তার হাসিটাও আপনি অনুসরণ করবেন এটাই স্বাভাবিক। এটাতো গেল আকলি দলিল। এবার আসুন দেখি কুরআন কি বলে,  কুরআনে কারিমে এরশাদ হ 


أَطِيْعُوا اللّٰهَ وَ أَطِيْعُوْا الرَّسُوْلَ وَ اُولِى الأَمْرِ مِنْكُمْ—
হে ঈমানদারেরা তোমরা আল্লাহ ও তার রাসুলের অনুসরণ কর........
অপর জায়গায় এরশাদ হচ্ছে—
وَمَنْ يُطِعِ الرَسُوْلَ فَقَدْ فَازَ فَوْزاً عَظِيْماً

যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অনুসরণ করল সে মহান সফলতা অর্জন করল।

সম্মানিত উপস্থিতি!
রাসুল সাঃ এর মুহাব্বত ও ইত্বাআত সংক্রান্ত আলোচনার মাঝে প্রাসঙ্গিক কিছু না বললে আলোচনার হক আদায় হবে না। বাংলাদেশে রাসুল এর ভালবাসার দাবিদারদের আজ অভাব নেই। সাড়ে তিন হাত শরীরের কোথাও তন্নতন্ন করে খুঁজলেও নবির একটা সুন্নাহ খুঁজে পাওয়া যাবে না অথচ সে দাবি করে বসে আছে আশেকে রাসুল। রবিউল আউয়াল মাস আসলে মিলাদুন্নবি পালন করে মিষ্টি আর জিলাপি খায়, অথচ নবির চরিত্রের মাঝে কালিমা লেপনকারী কুলাঙ্গারদের বিরুদ্ধে তাদের একটা জবানও চলেনা। এ হল তাদের নবিপ্রেমের দৃষ্টান্ত।

নবিপ্রেমে সিক্ত প্রিয় ভায়েরা আমার!
পরিষ্কার ভাষায় আজ এদেরকে বলে দিতে চাই, তোরা আসলে আশেকে রাসুল নস, তোরা হলি আশেকে শয়তান, আশেকে জিলাপি আর আশেকে শিন্নি। শিন্নী খেয়ে নবিপ্রেম দেখানো দাজ্জাল তোরা। হাজারো ধিক তোদের প্রতি। হাজারো ধিক তোদের প্রতি।

প্রিয় বন্ধুরা আমার!
এবার জেনে নেয়া যাক যে, প্রকৃত আশেকে রাসুল কারা?  এ প্রসঙ্গে আমি বলব, নবির চরিত্রের উপর আঘাত আসার সাথেসাথে যারা নিজের জানের মায়া ত্যাগ করে কোন কুফরি ও তাগুতি শক্তির পরোয়া না করে নবির ইজ্জতের হেফাজতের জন্য বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে বিন্দু পরিমাণ কুণ্ঠাবোধ করেনা তারাই প্রকৃত আশেকে রাসুল। সর্বোপরি ৫ ই মে শাপলাচত্বরে যারা নবির মুহাব্বতে নিজেকে নজরানা পেশ করে শাহাদাত বরণ করেছেন তারাই কেবল আশেকে রাসুল এবং তারাই কেবল নবির প্রতি ভালবাসার দাবি করতে পারে।

মুহতারাম হাযিরিন! 
মোটকথা হল, রাসুলকে ভালবাসার দাবি করতে হলে তাঁর সুন্নাহকে অনুসরণ করতে হবে। তাঁর সুন্নাহর বাস্তবায়ন করতে হবে। যারা নবির সুন্নাহকে ভালবাসে না, সুন্নাহ অনুসারে চলেনা তারা কখনো আশেকে রাসুল হতে পারে না। পরিশেষে আমার আরজ হল, আসুন আমরা নবির সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরি। নিজের জীবনে ও সমাজে সুন্নাহর বাস্তবায়ন ঘটাই।

ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.